দিনাজপুরে পাশাপাশি মসজিদ-মন্দির: সম্প্রীতির অনন্য দৃষ্টান্ত

দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলায় পাশাপাশি অবস্থিত মসজিদ ও মন্দিরে চলে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে হিন্দু এবং মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা এখানে একে অপরের উৎসব এবং ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা করে আসছেন, যা তাদের মধ্যে সম্পর্কের নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এই দুই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান— একদিকে সনাতন ধর্মের মন্দির, অন্যদিকে ইসলাম ধর্মের মসজিদ— একই প্রাচীরের দু’পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে, যেখানে সম্প্রীতির পরিবেশে সবাই একে অপরকে সহায়তা করে। এই উদাহরণটি শুধু দিনাজপুরের নয়, বরং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক শক্তিশালী বার্তা সারা দেশে ছড়িয়ে দিচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বীরগঞ্জের ৬নং নিজপাড়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড মণ্ডলপাড়ায় প্রায় ৩ শত বছরের বিষ্ণু মন্দির রয়েছে। ইটের প্রাচীর দিয়ে ঘেরা এই মন্দিরটির উত্তরে সংলগ্ন ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় দামাইক্ষেত্র জামে মসজিদ। এ মসজিদে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ জন মুসল্লি নামাজ আদায় করেন। সূচনা লগ্ন থেকে মন্দিরে পূজা-অর্চনা এবং মসজিদের কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। দীর্ঘদিন ধরে ধর্মীয় কার্যক্রম চললেও সেখানে কখনো কোনো মতবিরোধের সৃষ্টি হয়নি। বরং হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পূজা-পার্বণে মুসলিমদের সহযোগিতা স্থানীয় হিন্দুদের উজ্জীবিত করে রেখেছে।
মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. খাইরুল আলম বলেন, ‘মসজিদ প্রতিষ্ঠার পর থেকে কখনো নামাজিরা কোনো বাধা সৃষ্টি করেনি। দেওয়ালের অপর দিকে অবস্থিত মন্দিরের পুরোহিত ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে মসজিদের কমিটির লোকজনের মধ্যে সুমধুর সম্পর্ক বিরাজ করছে।’
সার্বজনীন বিষ্ণুমন্দিরের পূজারী তৃপ্তি রানী রায় বলেন, ‘৪০ বছর ধরে এই মন্দিরে পূজা-অর্চনার কাজ করে আসছি। কখনো কেউ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেনি। বরং এলাকার মুসলিমরা সহযোগিতা করে থাকেন। মন্দিরের পূজারী ও মসজিদের সমন্বয়ের মাধ্যমে চলে হিন্দুদের পূজা-পার্বণ।’
মসজিদের সদস্য তুহিন ইসলাম বলেন, ‘আমরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মধ্যে ধর্মীয় সহাবস্থানের মাধ্যমে উভয় ধর্মের কার্যাদি পালন করে যাচ্ছি, আমরা একে অপরের প্রতিবেশী।’
নিজপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান আনিস বলেন, ‘হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরল মিলবন্ধন দেখে আমি অভিভূত। ভবিষ্যতে ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সামাজিক বন্ধন ধরে রাখতে চাই। এক পাশে পূজা-অর্চনা, অন্য পাশে নামাজ। আমাদের মাঝে কোনো দ্বন্দ্ব নেই, নেই বিভেদ। তাদের মধ্যে সামাজিক সম্প্রীতি রয়েছে।’
বীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফজলে এলাহী বলেন, ‘এক পাশে খোল-তাল এবং পূজা-অর্চনার ধোঁয়ার গন্ধ, অন্যপাশে আতরের সুগন্ধ। পাশাপাশি অবস্থিত দুটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে নিজ নিজ ধর্ম পালন করছে দুটি ধর্মের মানুষ। প্রত্যেক ধর্মের মানুষ সম্প্রীতি বজায় রেখে ধর্ম পালন করছে। এমন সম্পর্ক এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ও বন্ধুত্বের পরিচয় বহন করে।’
আপনার মতামত লিখুন